বাংলাদেশে স্টারলিংকের কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের, স্পেসএক্স ও টেসলার মালিক ইলন মাস্কের ফোনালাপের পর এ উদ্যোগ সামনে আসে। জানা গেছে, কোম্পানির প্রতিনিধিরা বর্তমানে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। স্টারলিংকের সঙ্গে তিন মাসের মধ্যে বাণিজ্যিক চুক্তি চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, স্টারলিংকের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে উচ্চগতির ইন্টারনেট সরবরাহ করে দেশের ডিজিটাল অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার আশা করা হচ্ছে।
স্টারলিংক হল এলন মাস্কের মালিকানাধীন স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠানের একটি স্যাটেলাইট ইন্টারনেট প্রকল্প। এর মাধ্যমে হাজারো ছোট স্যাটেলাইট পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপন করে ইন্টারনেট পরিষেবা সরবরাহ করা হচ্ছে। সাধারণত, প্রচলিত ইন্টারনেট সেবা ফাইবার অপটিক বা মোবাইল টাওয়ারের ওপর নির্ভরশীল। তবে স্টারলিংক সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যা সরাসরি স্যাটেলাইট থেকে ব্যবহারকারীর কাছে ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়।
স্পেসএক্স ২০১৫ সালে স্টারলিংক প্রকল্প শুরু করে এবং ২০১৮ সালে প্রথম প্রোটোটাইপ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে। এরপর ২০১৯ সালে বাণিজ্যিকভাবে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ শুরু হয়। বর্তমানে পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে (Low Earth Orbit - LEO) প্রায় ৫,০০০+ স্টারলিংক স্যাটেলাইট কাজ করছে এবং ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে।
বর্তমান বিশ্বে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবার চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চল বা দুর্গম এলাকায় এখনো উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া একটি চ্যালেঞ্জ। এই সমস্যা সমাধানের জন্যই স্টারলিংক প্রকল্পের সূচনা করা হয়েছে। এটি মূলত স্পেসএক্স কোম্পানির একটি স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা, যা বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সরবরাহের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে।
স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক:
স্টারলিংক স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবী থেকে প্রায় ৫৫০ কিলোমিটার ওপরে নিম্ন কক্ষপথে স্থাপন করা হয়। প্রচলিত স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের তুলনায় এটি অনেক কাছাকাছি, ফলে ডেটা আদান-প্রদানে দেরি (latency) কম হয়।
-গ্রাউন্ড স্টেশন ও ইউজার টার্মিনাল:
ব্যবহারকারীদের কাছে ইন্টারনেট পৌঁছানোর জন্য স্টারলিংকের একটি বিশেষ ডিশ অ্যান্টেনা বা রিসিভার টার্মিনাল প্রয়োজন হয়। এই অ্যান্টেনাটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাছাকাছি থাকা স্টারলিংক স্যাটেলাইটের সঙ্গে সংযুক্ত হয় এবং তথ্য পাঠানো ও গ্রহণ করে।ডেটা ট্রান্সমিশন:
ব্যবহারকারীর পাঠানো তথ্য (ডাটা) প্রথমে নিকটবর্তী স্টারলিংক স্যাটেলাইটে পৌঁছায়। এরপর স্যাটেলাইটটি তা নিকটতম গ্রাউন্ড স্টেশন বা অন্য স্যাটেলাইটে প্রেরণ করে, যা পরে ইন্টারনেট সার্ভারের সঙ্গে সংযুক্ত হয়। এভাবে তথ্যের লেনদেন সম্পন্ন হয় এবং ব্যবহারকারীরা উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা উপভোগ করতে পারেন।
উচ্চগতির ইন্টারনেট:
স্টারলিংক ব্যবহারকারীদের গড় ইন্টারনেট গতি ১০০-২৫০ Mbps পর্যন্ত হতে পারে। ভবিষ্যতে এই গতি আরও বাড়তে পারে।কম ল্যাটেন্সি:
প্রচলিত স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের তুলনায় স্টারলিংকের ল্যাটেন্সি অনেক কম, যা ২০-৪০ মিলিসেকেন্ড পর্যন্ত হতে পারে। ফলে ভিডিও কল, গেমিং এবং লাইভ স্ট্রিমিং নির্বিঘ্নে চালানো সম্ভব।
যেকোনো স্থানে সংযোগ:
শহর বা গ্রাম, পাহাড় বা সমুদ্র—যেকোনো স্থানে স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবা প্রদান করতে পারে, যেখানে ফাইবার অপটিক বা মোবাইল নেটওয়ার্ক পৌঁছায় না।দ্রুত সংযোগ স্থাপন:
প্রচলিত ইন্টারনেট অবকাঠামোর প্রয়োজন না থাকায় স্টারলিংক খুব সহজেই স্থাপন ও সক্রিয় করা যায়।❌ মূল্য বেশি: স্টারলিংকের রিসিভার সেটআপ ও মাসিক ফি তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল। বর্তমানে ব্যবহারকারীদের জন্য ডিশ কিটের দাম ৪৯৯ ডলার এবং মাসিক সাবস্ক্রিপশন ১১০ ডলার।
❌ মূল্য বেশি: স্টারলিংকের রিসিভার সেটআপ ও মাসিক ফি তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল। বর্তমানে ব্যবহারকারীদের জন্য ডিশ কিটের দাম ৪৯৯ ডলার এবং মাসিক সাবস্ক্রিপশন ১১০ ডলার।
❌ বিশ্বব্যাপী অনুমোদন: প্রতিটি দেশের সরকার ও নীতিনির্ধারকদের অনুমোদন পেতে স্টারলিংককে কাজ করতে হয়, যা অনেক সময় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়।
র্তমানে স্টারলিংক বিশ্বের ৬০টিরও বেশি দেশে সেবা প্রদান করছে এবং ক্রমাগত নতুন দেশে সম্প্রসারিত হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও উন্নত স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবার গতি ও কার্যকারিতা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
স্টারলিংক যদি স্বল্প খরচে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে, তাহলে এটি বিশ্বের ডিজিটাল বিভাজন দূর করার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে পারবে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর গ্রামীণ ও দুর্গম অঞ্চলের মানুষ উচ্চগতির ইন্টারনেটের সুবিধা পেতে পারবে, যা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও ব্যবসার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
স্টারলিংক হলো একটি যুগান্তকারী প্রযুক্তি, যা ভবিষ্যতে ইন্টারনেট ব্যবস্থার ধরন পরিবর্তন করতে পারে। এটি এমন জায়গাগুলোতে ইন্টারনেট পৌঁছে দিতে সক্ষম, যেখানে প্রচলিত অপটিক্যাল ফাইবার বা মোবাইল নেটওয়ার্ক পৌঁছায় না। যদিও কিছু চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান, তবে প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে স্টারলিংক আরও বেশি কার্যকর ও সাশ্রয়ী হয়ে উঠতে পারে।
বিশ্ব যখন ডিজিটাল রূপান্তরের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন স্টারলিংকের মতো প্রযুক্তি একটি নতুন বিপ্লবের দ্বার উন্মোচন করতে পারে, যা সবার জন্য ইন্টারনেট সেবাকে আরও সহজলভ্য করে তুলবে। 🚀✨স্টারশিপ: মহাকাশ ভ্রমণের ভবিষ্যৎ SpaceX। ?